বাংলাদেশে ইকমার্সের জোয়ার বেশ জমিয়ে শুরু হয়েছে আরো কয়েক বছর আগেই। আর দশটা গ্রোয়িং সেক্টরের মতই আমাদের ইকমার্স সেক্টরেও না বুঝেই ঝাপিয়ে পড়ার ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল বেশ ভালভাবেই।
করোনাকালীন সময়ে লকডাউনের কারনে দোকানপাট থেকে শুরু করে অফিস আদালত সবই যখন বন্ধ তখন আপামর আমজনতা ইকমার্সের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বুঝতে পারে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য অনেকেই ইকমার্স এর উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই সুযোগে আরেকবার আমরা ইকমার্স এর হাইপ লক্ষ্য করছি। 
ফেসবুক পেজ খুলেই এফ-কমার্স শুরু করে দেয়া যায় বলে এই সময়টায় ফেসবুক পেজ খোলার হিড়িক চোখে পড়ার মতো। এমনকি বড় বড় কর্পোরেটগুলোও এখন ফেসবুকে তাদের কার্যক্রম নতুন করে শুরু করেছেন।
বাংলাদেশ ই কমার্স বিজনেস কর্পোরেশন গুলো তাদের বিজনেস প্রচার, প্রসার ও অস্তিত্ব টিকিয়ে কম্পিটিশনে এগিয়ে থাকতে হাজারো ভিন্ন পন্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে আছে এক ফেসবুক বিজ্ঞাপনে। বিষয়টিকে সহজ মনে করে নতুন অসংখ্য ই কমার্স শপ তৈরী হচ্ছে। (সহজ -ই তো! টাকা থাকুক আর নাই থাকুক, প্রোডাক্ট নিজের কেনা হোক বা না হোক, একটা ওয়েবসাইট তৈরী করবো (বা ফেসবুকে পেজ ), প্রোডাক্ট এর ছবি পোস্ট করবো (তার কোয়ালিটি যাই হোক না কেন), দুই তিন ডলারের এড দেব, আরও কি লাগে? মানুষ অনলাইনে অর্ডার করবে, ফাটাফাটি বিজনেস!!!) ছোট, বড় অসংখ্য কোম্পানি আগামী দিনগুলিতে ই কমার্স এ আসছে। সবকিছুই যথেষ্ট সোজা। আবার দেউলিয়া হয়ে যাওয়াটাও খুব একটা কঠিন নয়।
ফেসবুক বিজ্ঞাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল : টার্গেট অডিয়েন্স। যাদের টাকা আছে, তারা ভাবতে পারেন, সবাইকে টার্গেট করি, প্রচার করি, ব্র্যান্ড পরিচিতি হোক, পরে মানুষ এমনিতেই কিনবে। বেশ কিছু বড় কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে আমার তাই মনে হয়েছে। একই বিজ্ঞাপনে সোফা সেট আছে আছে, পুই শাক ও আছে, আবার ল্যাপটপ ও আছে। সেইরাম বিজ্ঞাপন ! মানুষ না কিনে যাবে কই? একই জায়গায় সোফাসেট থেকে শুরু করে পুইশাক, ল্যাপটপ সব-ই পাওয়া যায়। হাইলি পাওয়ারফুল টার্গেট অডিয়েন্স সেট হল ? তাই না? আপনারাও অনেকে এই কাজ করেন। একই বিজ্ঞাপনে যত পারেন ইমেজ দেন, আর, সব প্রোডাক্ট এর ইমেজ। এক প্রোডাক্ট এর সাথে অন্য প্রোডাক্ট এর কোনো ইন্টার কানেকশন নাই, এমন সব আজগুবি ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন !(সোফাসেট, পুঁইশাক আর ল্যাপটপ) ভাবনা টি এইরকম: আলাদা বিজ্ঞাপন করলে খরচ বাড়বে , এক বিজ্ঞাপনে সব দিলে অল্প খরচ ! আর একটা পরিবারে সোফাসেট, পুঁইশাক, ল্যাপটপ – সবই তো লাগে, তাই না। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল : পুঁইশাকের টার্গেট অডিয়েন্স আর ল্যাপটপের টার্গেট অডিয়েন্স কি এক ? উত্তর যদি না হয়, তাহলে প্রশ্ন হল , এইভাবে বিজ্ঞাপন করে কাদের টার্গেট করছেন? ফেসবুককে টাকা দেয়া ছাড়া আর কিছু কি লাভ হচ্ছে এইসব করে ? আহ, লাখ লাখ রিচ আর হাজার হাজার লাইক কমেন্ট ধুয়ে পানি খাওয়া যায় না, যদি সেল না আসে।
ফেসবুক বিজ্ঞাপন নিয়ে বিশেষজ্ঞ বা সবজান্তা লোকের অভাব নেই। সবাই জানে। আর তার রেজাল্ট হল এইসব যা ইকমার্স বা এফকমার্সগুলো করছে।
বাংলাদেশে তথাকথিত ইকমার্স বা এফকমার্স ব্যাবসায়গুলো যা করে তা হল : আকাশে বাতাসে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন ছুড়ে দেয়া। যেন আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখলেই তা পোছে যাবে প্রিয়জনের কাছে। এবং কেন যেন তারা তথাকথিত ইম্প্রেশন এডস, বুস্ট বা কদাচিৎ মাল্টি প্রোডাক্ট এডস ইত্যাদির অসম্ভব ভক্ত। কিন্তু এগুলো ছাড়াও আরো অনেক শক্তিশালী বিজ্ঞাপন পদ্ধতি আছে। কাস্টম অডিয়েন্স বা লোকালাইক অডিয়েন্স তৈরী করা, রিটার্গেটিং এডস, লীড এডস, ভিডিও এডস, ডায়নামিক এডস, রিচ এন্ড ফ্রিকুয়েন্সি, লাইভ রিভিউ, কন্টেস্ট বা সুইপস্টিক্স, রয়েছে স্প্লিট টেস্ট, রয়েছে এডস রিভিউ এবং আরো অনেক কিছু। ফেসবুক বিজ্ঞাপনে তথা আপনার ই কমার্স বিজনেসে সফল হতে হলে এগুলো সব-ই করতে হবে। না করে উপায় নাই। ফেসবুক শুধু শুধু এইসব হাজারো স্ট্র্যাটেজি আবিষ্কার করে নাই ! তারা নিত্য নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করছে আর আপনাকে এই ট্রেন্ডস এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।