একজন উদ্যোক্তা কিভাবে বাসায় তৈরি খাবারের ব্যবসা শুরু ও প্রসার করতে পারবে তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক তুলে ধরা হলো।
১. হোমমেড খাবারের বিজনেস শুরু করার ক্ষেত্রে যে খাবার বানাতে নিজে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এবং যেটা আপনার সবচেয়ে ভালো রান্না হয় সেই খাবার নিয়ে কাজ করা উচিত।যেমন: কেউ অনেক রকমের মিষ্টি বানাতে পারে কাঁচাগোল্লা ,রসগোল্লা, গোলাপ জামুন, রসমালাই ইত্যাদি।
২. হোমমেড খাবারের বিসনেসের ক্ষেত্রে প্রথমে নিজের প্রতিবেশী , বন্ধু বান্ধব এবং আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে যে অপরচুনিটি পাওয়া যায় সেটা গ্রহণ করা উচিত।
৩. ব্যবসার প্লান ঠিক করার পরেও হঠাৎ করে আসা কোন সমস্যার কারণে সেটা শুরু করা নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মনোবল হারালে চলবে না। একটা প্ল্যান কাজ না করলে পরবর্তীতে নতুন করে নতুন প্ল্যান নিয়ে আগাতে হবে। আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক শক্তি একজন উদ্যোক্তার মূলধন।
৪. হোমমেড খাবারের ক্ষেত্রে খাবারের নাম এবং ছবি অনেক গুরুত্ব বহন করে তাই এই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
৫. যে প্লাটফর্মে কাজ করুন না কেন সততার সাথে কাজ করতে হবে। যেকোনো উদ্যোগের জন্য সৎ থাকা এবং সৎ চিন্তা করা ব্যবসা কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
৬. হোমমেড ফুড এর দাম এবং মান নির্ধারণে সতর্ক হতে হবে।কম দামে ভালো মানের খাবার দেয়ার চেষ্টা ‌আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকিয়ে রাখবে। তাই বলে এমন কোনো দাম নির্ধারণ করা যাবে না যেটা আপনার ব্যবসায়ীক ক্ষতির কারণ হবে পরবর্তীতে। ক্রেতা একবার যখন বুঝে যাবে আপনি পরিচ্ছন্ন ,নিরাপদ এবং সুস্বাদু , পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করছেন তখন ক্রেতার কাছে দামের ব্যাপারটা আর বেশি মনে হবে না।
৭. রান্না করা খাবার সেল করা নিয়ে অন্যের কটাক্ষ শুনে হীনমন্যতাবোধ করা যাবে না। নিজের উপর আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
৮. আত্মীয়স্বজনদের চাইতে বন্ধুদের কাছ থেকে সাপোর্ট বেশি পাওয়া যায়। তাই প্রথম দিকে যতটা সম্ভব বন্ধুদের সহায়তা নেয়ার সুযোগ থাকলে সেটা গ্রহণ করা উচিত।
৯. কখনোই ভাবা যাবে না কাজটা শখ করে শুরু করেছি শুরু থেকেই প্রফেশনাল ভাবে কাজ করতে হবে।এটাই আমার আইডেন্টিটি সেটা ভেবে সেই অনুযায়ী সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে।
১০. প্রফেশনাল শেফ কোর্স এবং ফটোগ্রাফি টা ভাল করে শিখে নেওয়া দরকার।
১১. সেলফ হাইজিন, ফুড সেফটি, প্যাকেজিং খুব গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার।
১২.একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্রেতা খুশি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার ব্যবসা হবেনা। বিজনেস এর ক্ষেত্রে ক্রেতা অলওয়েজ রাইট।
১৩. কোন কাজ করতে গেলে ভুল হতেই পারে কারণ আমরা মানুষ তবে সে ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে পরবর্তীতে আরো সুন্দর করে গুছিয়ে নিতে হবে।
১৪. একা কোনো কাজে ভালো আগানো যায় না মনে রাখতে হবে সবাইকে সাথে নিয়ে যেকোনো কাজ সুন্দরমতো সমাধান করা যায়। একই খাবার নিয়ে কাজ করছি বলে কখনো অন্য সেলারকে খাটো করে দেখা যাবে না। বরং কখনো অর্ডার এর পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে নিজে একা সামলাতে না পারলে সেম খাবার নিয়ে যিনি ভালো কাজ করেন তাকে রেফারেন্স করা উচিত।
১৫. সেল পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেন করে পোস্ট দেয়া উচিত। গুগল থেকে নেয়া কোনো ছবি বা অন্যের ছবি সেল পোস্টে ব্যবহার করা উচিত না।
১৬. একটা সেল গ্রুপের জন্য ক্রেতারা হলেন মূল প্রাণ। ক্রেতাদের রিভিউ পোষ্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন সেলারের জন্য।
১৭. নিজের বিজনেস পেইজ কে সবার কাছে সুপরিচিত করার জন্য প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি এবং পোস্ট কনটেন্ট নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করা উচিত। প্রডাক্ট প্লান, পোর্শন সেট, প্রাইসিং, টেস্টিং, মার্কেটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিজনেসের জন্য।
১৯.পেইজের জন্য লোগো, বিজনেস কার্ড, ক্যাশ মেমো বা মানি রিসিপ্ট, সম্ভব হলে পেইজের নাম দিয়ে ব্যাগ তৈরি করে নেয়া দরকার।
১৯. আপনি যে প্লাটফর্মে ই কাজ করুন না কেন সেখানে আপনার ক্যারিয়ার তৈরি করে নিতে সচেষ্ট থাকুন। মনে রাখবেন নিজের পেইজ নিজের আইডেন্টিটি, প্ল্যাটফর্ম এর প্রোফাইল আমার ক্যারিয়ার । দুটোই গুরুত্বের সাথে, সততা নিয়ে কাজ করতে হবে।
২০. খাবারের অর্ডার এর কোয়ান্টিটি বা পরিমানের পাশাপাশি সব সময় খাবারের কোয়ালিটির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমি যদি ক্রেতাকে বেশি পরিমাণে খাবার ডেলিভারি করি কিন্তু খাবারের কোয়ালিটি যদি ভালো না হয় তা কখনোই ক্রেতার মন রক্ষা করতে পারবে না। এবং ওই ক্রেতা কখনোই আমার রিপিট কাস্টমার হবে না।
যেকোনো কাজ আনন্দ নিয়ে করলে তার সফলতা সুনিশ্চিত।বিজনেসটা একদিনের জন্য না ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে সারা জীবন টিকে থাকতে পারলেই আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা।